ডেস্ক নিউজ:
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের অধিকাংশ মানুষ। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী। জলবায়ুর এই ঝুঁকিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
‘তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতে জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বহুমুখী সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হারটিং সেফারও।
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের ঝুঁকি মোকাবেলার বিষয়গুলো যদি না দেখা হয় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। এখন যেটা প্রতি বছর এক থেকে দেড় শতাংশ হারে বাড়ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে অভিবাসনের চাপ পড়বে অন্যান্য এলাকায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় এর পরেই রয়েছে বরিশাল ও ঢাকা। এ ছাড়া রাজশাহী ও ময়মনসিংহ মাঝারি ঝুঁকিতে এবং সিলেট, রংপুর বিভাগ মৃদু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
এতে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ এলাকা। মাঝারি ধরনের ঝুঁকিতে আছে ৬৬ দশমিক ২০ ভাগ অঞ্চল। এর বাইরে আরও সাড়ে ১২ শতাংশ এলাকায় মৃদু ঝুঁকি রয়েছে। দেশের মাত্র ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এলাকা ঝুঁকির বাইরে আছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে সম্ভাব্য ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় কৃষি খাতের বাইরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃষি খাতের বাইরে ১৫ শতাংশ বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে জলবায়ু পরিবর্তনে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে আসবে। কৃষি খাতের বাইরে ৩০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবনযাত্রার মান না কমে উল্টো বাড়বে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তুলনামূলক নিম্নভূমি বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। একই কারণে ভারতীয় মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় ও তৎসংলগ্ন স্থলভূমিতে বন্যার প্রাদুর্ভাব বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। ফলে ঢাকা, করাচি, মুম্বাই ও কলকাতার মতো নগরগুলোতে অন্তত ৫ কোটি বাড়তি লোকের চাপ পড়বে।
বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জীবনযাত্রার মান বছরে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়াবে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। একই সময়ে কার্বন নিঃসরণে তীব্রতার কারণে জীবনযাত্রায় ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে বাড়তি তাপমাত্রার কারণে ৩ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে। ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দক্ষিণ এশিয়ায় আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু মোকাবেলায় আমরা অন্যদের থেকে অনেক ভাল অবস্থানে আছি। তবে এজন্য কম সুদে আরও ঋন দরকার। বর্তমান সরকার অনেক ভালো কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকার কিছু ঋনের ব্যবস্থাও করেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার আরও একবার ক্ষমতায় আসলে আমাদের ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার যে ভিশন আছে সেটা পূরণ হতে সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিউমিও ফান, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, বিশ্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হাডিন শেফার, মূখ্য অর্থনীতিবিদ মুথুরা মানি প্রমুখ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।